বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মহানগরের ৩৬নং ওয়ার্ডস্থ সাইনবোর্ড এলাকার আফরিন সোয়েটার্স নামক একটি
পেশাক তৈরী কারখানায় ২০২৩ সালের ২ মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গত ৬
সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং পর্যন্ত শ্রমিক আন্দোলন চলছিল।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান,২০২৩ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর এর বেতন এবং
ওভার টাইম এর পাওনাদি প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা বকেয়া রেখে কারখানাটি বিনা
নোটিশে বন্ধ করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল ইসলাম রাজ গা ঢাকা দেন।
প্রায় দশ মাস যাবৎ বন্ধ থাকা কারখানাটির কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না ।
মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনের যোগাযোগ করলে দেই দিবো দিচ্ছি বলে কালক্ষেপন করতে
থাকেন। শ্রমিকদের না জানিয়ে কারখানা বন্ধবস্থায় গোপনে বেশ কিছু মেশিন
পত্র বিক্রি করে আবারও গা ঢাকা দেন মালিক পক্ষ। পুনরায় ভূলভাল বুঝিয়ে
চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে পুরো ফ্যাক্টরীর মালামাল গোপনে বিক্রয়ের
নির্দেশ দেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল ইসলাম রাজ।
গোপনের ফ্যাক্টরীর যাবতীয় মালামাল বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান মাহাবুব
আলম বিভিন্ন ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এক
পর্যায়ে ফ্যাক্টরীর আশপাশে থাকা শ্রমিকরা খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হয়।
কয়েকজন ক্রেতার উপস্থিতিতে ফ্যাক্টরীর চেয়ারম্যান শ্রমিকদের আশ্বাস্ত
করেন,তোমাদের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের জন্যই ফ্যাক্টরীর যাবতীয় মালামাল
বিক্রয় করা হবে।এতে করে ফ্যাক্টরীর চেয়ারম্যান মাহাবুব আলম শ্রমিকদের
তোপের মুখে পড়েন।
শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের বিকল্প কোন ব্যবস্থা আছে কিনা জানতে
চেয়ে পালিয়ে থাকা ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজ এর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ
করলে তিনিও বেকায়দায় পড়ে যান।
এদিকে শ্রমিকরা তাদের পাওনাদি বুঝিয়ে না পাওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যানকে
বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। চেয়ারম্যান মাহাবুব ঐ ফ্যাক্টরীর ব্যবস্থাপনা
পরিচালক রাশেদুল ইসলাম রাজকে বারবার জানালেও কোন প্রতিকার ও প্রস্তুতির
খবর জানাননি।
এমতবস্থায় ৬ সেপ্টেম্বর দিনভর আন্দোলনরত শ্রমিকরা রাতভর অপেক্ষা করে।
পরের দিন ৭ সেপ্টেম্বর পুরোদিন ফ্যাক্টরীর সামনে অবস্থান নেয় শ্রমিকরা।
ঠিক একইভাবে ৮ সেপ্টেম্বর সারাদিন শেষে রাতে গিয়ে আশ্বাস পায় রাতেই তাদের
পাওনাদি পরিশোধ করা হবে। সেদিনও কথা রাখতে পারেননি মালিক কতৃপক্ষ । পরের
দিন রাত নয়টার দিকে ফ্যাক্টরীর মালামাল বিক্রি করে শ্রমিকদের পাওনাদি
পরিশোধ করা হয় ।
চেয়ারম্যান মাহাবুব আলম জানান,অফিস কর্মকর্তা কর্মচারীসহ শ্রমিকদের
সংখ্যা ১৩৩ জন,তাদের বকেয়া বেতন প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। যারা বকেয়া বেতন পান
তাদের প্রত্যেককে আমি চিনি।
এহেন পরিস্থিতির উপস্থিতিতে শিল্প পুলিশের এএসপি ( টঙ্গী জোন) জনাব
মোশারফ হোসেন, সাইনবোর্ড এলাকার দায়িত্ থাকা উপ- সহকারী পরিদর্শক মি:
মাসুদসহ জি এমপির গাছা থানার কয়েকজন উপ-পরিদর্শক, তদন্ত ওসি আব্দুল্লাহ
আল মামুন এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিয়াউল ইসলামকে পুরো পরিস্থিতি অবগত
করি।
শ্রমিকদের আন্দোলন থামাতে সেনাবাহিনীর একটি টিমও সেখানে আসেন।
সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে ঢাকা ও গাজীপুরের ছাত্র সমন্বয়করা কয়েকজন আসেন।
পরিস্থিতির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সকলের দাবি ছিল যেকোনো মূল্যে শ্রমিকদের
বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ করতে হবে।
এদিকে গত কয়েকদিনের রাত জাগা ও ঠিকমত খানাপিনা না হওয়ায় কয়েকজন নারী
শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার স্থানীয়
মান্যগন্য ব্যক্তিবর্গরা এই অমানবিক দৃশ্য দেখে অসহায় শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ান।
অবস্থা দৃষ্টে মালামাল ক্রয়কারীরাও অপেক্ষা করেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষের
অনুমতি সাপেক্ষে সর্বোচ্চ দরদাতা যে বা যিনি হবেন,তাদের নিকট উপযুক্ত
বাজারমূল্য অনুযায়ী মালামাল বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়ে শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধ করা হবে।
সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হন ভাই ভাই মেশিনারিজ।
ফ্যাক্টরীর চেয়ারম্যান মাহাবুব আলম তার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুল
ইসলাম রাজকে মুঠোফোনে সমস্ত ঘটনার বিবরণ ব্যাখ্যা করলে তিনি মুঠোফোনে
মালামাল বিক্রয় পূর্বক সমস্ত টাকা শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাদি পরিশোধের
অনুমতি দেন। সেই মতে ছাত্র জনতা,সেনাবাহিনী,শিল্প পুলিশ ও গাছা থানাকে
অবগত পূর্বক নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি অনুযায়ী মালামাল ডেলিভারি দেন এবং সকলের উপস্থিতিতে মালামাল বিক্রয় লব্ধ সমুদয় টাকা
বুঝিয়া পাইয়ে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাদি ঐ রাতেই সহি স্বাক্ষর রেখে যার যার বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ করা হয়।
পরবর্তীতে এই বিষয়ে কোন প্রকার আইনি জটিলতা যাতে না হয়। এমন বিবেচনায়
চেয়ারম্যান মাহাবুব আলম ফ্যাক্টরীর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বলেন,বিক্রয়ের
অনুমতি লিখিত আকারে দেন। রাজ বলেন, আমি অনুমতি দিলাম,আমার মূখের কথায়
দলিল,লিখিত প্রয়োজন নেই। চেয়ারম্যান বলেন,আপনি আগে পরে অনেক ঝামেলা করেছেন। লিখিত অনুমতি দিলেই ভাল হবে। রাজ বলেন ওসবের কোনো প্রয়োজন নেই।
আপনি নিশ্চিত মনে করে কাজ করেন,বাকিটা আমি বুঝবো। তবে পুরো টাকা বুঝিয়া পাইয়া আমার পক্ষে আপনি দায়িত্বশীল হয়ে গেইট পাশ চালান করে দিলে কোন অসুবিধা নেই।
পাশাপাশি এটাও বলেন, যারা মালামাল ক্রয় করেছেন, তাদেরকে বলবেন,মেশিনারিজ গুলো অদ্য হইতে অর্থাৎ ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর২০২৪ইং পর্যন্ত তাদের জিম্মায় রাখতে। যথা সম্ভব মালামাল ফেরত নিবো।১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং এর মধ্যে ক্রয়কারীদের লোড আনলো লেবার কস্টিং সহ
প্রয়োজনে তাদেরকে কিছু লভ্যাংশ দিয়ে বিক্রিত মালামাল গেইট পাশ চালান অনুযায়ী ফেরত আনবো। অন্যথায় ঐ সমস্ত মালামাল ও মেশিনারিজ এর প্রতি আমার এবং আপনার কোন দায় দাবি থাকবে না।
এদিকে ক্রয়কারীর তথ্যসূতে জানা যায়, চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের শর্ত মোতাবেক ক্রয়কৃত মালামাল যথা সময়ের মধ্যে ফেরত নিতে পারলে আমাদেরও কোন আপত্তি নেই ।