কাইয়ুম চৌধুরীঃ
১৩ নভেম্বর, ২০১০, সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বেইজ্জতি করে মঈনুল রোডের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কুখ্যাত দিন।
ওইদিন মধ্যরাত থেকে নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে তার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার কার্যক্রম শুরু করা হয়। নামাযের আগে সাদা পোশাকের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন বেগম জিয়ার সেনানিবাসের বাসার চারিদিকে অবস্থান নেয়।
সকাল হওয়ার সাথে সাথে তাদের সাথে যোগ দেয় পুলিশ, র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। পাশাপাশি ক্যান্টমেন্টের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর লোকজনও অবস্থান নেয়।
জাহাঙ্গীর গেটসহ ক্যান্টমেন্টে প্রবেশের সকল রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সকাল আটটার দিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন বেগম জিয়ার আত্মীয় স্বজন এবং তার বাবুর্টিসহ বাসায় যারা কাজ করেন তাদের সকলকে বের করে দেয়। সকাল ১১টার দিকে পুলিশ ও র্যাব খালেদা জিয়ার বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় তারা বাড়ির ভেতর ও বাইর থেকে মাইকে বেগম জিয়াকে বের হয়ে আসতে বলে। তারা বলে, যদি বেগম জিয়া স্বাভাবিকভাবে বের হয়ে না আসেন তাহলে তারা জোর করে তাকে বের করে আনবেন। তাদের এ আহবানে বেগম জিয়া তার আইনজীবীদের সাথে কথা বলতে চান। কিন্তু উচ্ছেদকারীরা তাকে সে সুযোগ না দিয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। বেগম জিয়া তাদের কথা মত বের হতে না চাইলে পুলিশ তার রুমের দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা খালেদা জিয়ার বাড়ির কর্মরত লোকজনদের আটক করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। এরপর ইচ্ছের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার রুমে প্রবেশ করে তাকে টেনে হেঁচড়ে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আইন-শৃক্মখলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গুলশান কার্যালয়ে পৌঁছে দেন। এ সময় বেগম জিয়া তার ব্যবহৃত কোন মালামাল সেখান থেকে আনতে পারেননি।
এরপর এক ব্রিগেডিয়ার কর্কশ ও অপমানজনক ভাষায় প্রেসব্রিফিং করেন।
সেদিন অপমানে কান্না করেন মজলুমা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার সাথে কান্না করেন দেশের কয়েক কোটি মা-বোনসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা।
ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মইনুল রোডের ৬নং বাড়ি , একটি সাধারন বাড়ি নয় । এই বাড়ি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষকের বাড়ি , এই বাড়ি একজন সেক্টর কমান্ডারের বাড়ি , এই বাড়ি একজন সেনা প্রধান ও একজন রাষ্ট্র প্রধানের বাড়ি, এই বাড়ি তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি। ইতিহাসের পাতায় নিবিড় সংযুক্ত এমন বাড়ি সত্যিই বিরল।
১৯৭২ সালে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে এ বাড়িটিতে সপরিবারে বসবাস করতেন জিয়াউর রহমান। সেনাপ্রধান হওয়ার পর তিনি সেনাপ্রধানের নির্ধারিত বাসভবনে না ওঠে ওই বাড়িতেই রয়ে যান। ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ এ বাড়িতেই জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে অন্তরীণ করেন। ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সিপাহী-জনতার তাকে মুক্ত করে। এরপর রাষ্ট্রপতি হওয়া থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শহীদ জিয়া এ বাড়িতেই থেকেছেন।
’৮১-র ৩০ মে বিপথগামী কিছু সেনা-কর্মকর্তার হাতে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে শাহাদাত বরণের পর বার্ষিক ১ টাকা খাজনা দেওয়ার শর্তে জিয়াউর রহমানের পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া হয় বাড়িটি। তৎকালীণ জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বাড়িটি খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দ দেয়।