আনোয়ার হোসেন, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভাবীর সঙ্গে অনৈতিক সর্ম্পকের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে দেববের বিরুদ্ধে। এ ঘটনা প্রকাশ পেলে গ্রাম্য সালিশে ভূক্তভোগী নারীর চুল কেটে দেওয়াসহ আর্থিক জরিমানা করেন মাতব্বররা। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উলিপুর উপজেলার উত্তর সাদুল্যা রসুলপুর এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের উত্তর সাদুল্যা রসুলপুর এলাকার উমেদ আলীর ছেলে মুরগী ব্যবসায়ী সুরুজ্জামান (৩৬) দীর্ঘদিন ধরে দুই সন্তানের জননী তার ভাবির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে আসছেন। সবশেষ গত ৪ মে সুরুজ্জামানের বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ভাবির সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে গোপনে তা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিডিও ধারণ করেন।
ঘটনার পরদিন সুরুজ্জামানের স্ত্রী বাড়িতে এসে স্বামীর মোবাইলে তাদের অন্তরঙ্গ ভিডিও দেখতে পেয়ে স্বজনদের জানান।
এ ঘটনায় গত ৬ মে রাতে স্বজনরাসহ স্থানীয়রা সালিশ বৈঠকের আয়োজন করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভূক্তভোগী ওই নারীর চুল কেটে দেওয়াসহ এক লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অপরদিকে দেবর সুরুজ্জামানকে ২০ বেতের আঘাত করার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক চলাকালে প্রকাশ্যে ওই ভূক্তভোগী নারীর মাথার চুল কেটে দেওয়া হয়। এ ঘটনা প্রকাশ হলে শুরু হয়ে নানা ধরনের সমালোচনা। সভ্য সমাজে এসে এ ধরনের ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার দুপুরে ভুক্তভোগী ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, ‘দেবর সুরুজ্জামান জোরপূর্বক আমার ক্ষতি করে তা মোবাইলে ধারণ করে। পরে তার স্ত্রী দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের জানায়। এরপর গ্রাম্য বিচার বসিয়ে সবাই এক পক্ষ হয়ে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে জোরপূর্বক আমার মাথার চুল কেটে দেয়। একই সঙ্গে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুরুজ্জামান অন্যায়ভাবে আমার ক্ষতি করলো। তাকে মাত্র ২০ টি বেতের আঘাত দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমি ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই।’
বিষয়টি যাতে থানা পুলিশ পর্যন্ত না যায়; এর জন্য তারা শনিবার (১১ মে) রাতে পুনরায় সুষ্ঠ বিচার করবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছে।
এ বিষয়ে সুরুজ্জামানের বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী রিক্তা বেগম (৩৫) জানান, ঘটনার সময় আমি বাবার বাড়িতে ছিলাম। পরে বাড়িতে এসে স্বামীর মোবাইলে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিডিও দেখতে পেয়ে মাতাব্বর মাইদুল ইসলামসহ স্থানীয়দের জানাই। তারাই বিচার সালিশ করেছে।
এদিকে বিষয়টির খোঁজ নিতে সংবাদকর্মীরা ওই এলাকায় গেলে সুরুজ্জামানের লোকজনের তোপের মুখে পড়েন। সালিশ বৈঠকে থাকা শাহিন মিয়া নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, সবার উপস্থিত মতামতের ভিত্তিতে ওই নারীর চুল কেটে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তার জরিমানাও করা হয়। অন্যদিকে সুরুজ্জামানের ২০ টি বেতের আঘাত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এ ঘটনার পর থেকে স্থানীয় মাতাব্বর মাইদুল ইসলাম গাঢাকা দেওয়ায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান জানান, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অঅভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।