চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া- সন্ধীপ গুপ্তছড়া নবনির্মিত ফেরীঘাটের প্রবেশপথ সড়কটি একদিনের জলোচ্ছাসেই বিলিন হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফেরী চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
তাতে হতাশ হয়ে পড়েছেন সন্ধীপ পারাপার ঘাটের যাত্রী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, স্থানীয় বাসিন্দা ও বিনোদন দর্শনার্থীরা।
নির্মাণের মাত্র দুই মাসে বর্ষার শুরুতেই সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বলে জানান।জীবনের ঝুকি নিয়ে স্প্রীডবোর্ড নিয়ে যাত্রীরা পারাপার হলেও যানবাহন,মালামাল পরিবহনে পড়েছে বড় বাধা।
স্হানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া সাগর উপকূলে চলতি বছরেই ২০০ কোটি টাকায় নির্মাণ করা হয় বাঁশবাড়িয়া- সন্ধীপ গুপ্তছড়া ফেরি ঘাট।
দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের ৪ লাখ মানুষের বহু কাঙ্ক্ষিত ফেরিঘাট গত ২৪ মার্চ উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. শাখাওয়াত হোসেন। এতে একদিকে দ্বীপ উপজেলাটির মানুষ পেয়েছিলো ফেরী সার্ভিস আর অন্যদিকে ফেরী চলাচলের জন্য তৈরি মনোরম ঘাটটি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে থাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমনে এলাকার অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে দেখা যায়। এমনি অবস্থায় ফেরী ঘাটটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যখন দিন দিন প্রত্যাশা বাড়ছিলো ঠিক এ সময়ে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের তীব্র প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে মাত্র একদিনেই ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় সেই ফেরীঘাটটি।
শনিবার( ৩১ মে) , সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,মাত্র একদিনের ঝড়ো আবহাওয়ায়ই যেন বদলে গেছে এই ফেরী ঘাটটির চিত্র। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে বাঁশবাড়িয়ায় বেড়িবাঁধ থেকে ফেরি দাঁড়ানোর ঘাট পর্যন্ত উভয় দিকে ব্লক দিয়ে তৈরি ৮০০ মিটার সড়কের বেশিরভাগ অংশের ইট ধ্বসে গেছে। পানিতে ধুয়ে গেছে সড়কে ব্যবহার করা বালি, মাটিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। ১নং ফেরি ঘাটের ঠিক পর থেকে দক্ষিণ অংশে লম্বাকৃতিতে ধস নেমে প্রবল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়া ২নং ঘাটের ঠিক মুখ থেকে সড়কের মাঝামাঝি ফেটে দেবে গিয়ে দক্ষিণ অংশ ভেঙে বিলিন সমুদ্রে। এরপরের ব্লকের নিচ থেকে মাটি সম্পূর্ণরূপে সরে গিয়ে ম্যানহোল আকৃতিক বিশাল ফাঁকা গর্তে রূপ নিয়েছে।সকালে সাগরের জোয়ারের সময় প্রবল ঢেউ সেখানে বারবার আঘাত করতে থাকায় প্রতিমুহূর্তে গর্ত এবং ফাটল আরো বড় হচ্ছিল। এ কারণে পুরো সড়কটির মাঝামাঝি বড় ধরনের ধসের শংকা দেখা দিচ্ছিল। পরিদর্শনকালে এসব বিষয়ে হতাশা দেখা গেছে সন্দ্বীপের যাত্রী ও এই ঘাটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যদর্শনে আসা মানুষদের মাঝে।
সকালে সন্দ্বীপ পৌরসভা এলাকা থেকে স্পিড বোডে ঝুঁকি নিয়ে আসা বৃদ্ধ যাত্রী শহিদুল আলম বলেন, ফেরি সার্ভিসটি শুধু শীতকালেই সুন্দর,নিরাপদ। এখন আগের মতোই দুর্ভোগেই আছি আমরা। ফেরি তো বর্ষার প্রথমদিনেই বন্ধ হয়ে গেছে। এখন নিম্নচাপের কারণে স্পিড বোডও পাচ্ছিলাম না। ছেলে ওমানে যাবে। তার ফ্লাইট রাত ১০টায়, তাই ঝুঁকি নিয়েও আমাদেরকে আসতে হয়েছে। এসে দেখছি নতুন তৈরি সড়কটি ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
তিনি আমাদের সময় কে বলেন, ফেরি সার্ভিসটি অনেক দ্রুত কাজ করে চালু করা হয় সরকারের আগ্রহের কারণে। এই দ্রুত কাজ করতে গিয়ে কাজ ঠিকভাবে হচ্ছেনা বলে আগে থেকেই আলোচনা ছিলো। এখন বর্ষা না আসতেই নিম্নচাপের জোয়ারে সড়কটি একেবারে বিলিন হয়ে গেলো।
বিআইডব্লিটিএর উপ- পরিচালক মো. কামরুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, বাঁশবাড়িয়া ফেরী চালু হলেও আসলে আমাদের নির্মাণকাজ এখনো সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। এরই মধ্যে সমুদ্রে নিম্নচাপের কারণে সাগরের যে আঘাত তাতে ফেরিঘাটটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি আমাদের প্রকৌশলীরা দেখভাল করছে।
দ্রুত ও টেকসই ভাবে কাজ করার
জন্য দক্ষ লোক নিয়োগ করা হবে।
সন্ধীপের প্রবীন সাংবাদিক চারূ মিল্লাত জানায়,তড়িগড়িভাবে ফেরীটি চালু করতে গিয়ে রাস্তাটি শক্ত হয়নি,তড়িগড়ি না করে মজবুদ করে নির্মান করে চালু করা হোক।বর্তমানে সন্ধীপবাসী যাতায়াতে চরম দূর্ভোগে পড়েছে।