কাইয়ুম চৌধুরী, সীতাকুণ্ডঃ
ভারতের কলকাতায় নৃশংসভাবে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনার কে ভারতের কলকাতা নৃঃসংস ভাবে হত্যা মামলার অন্যতম দুই পলাতক আসামি মোস্তাফিজুর রহমান ফকির ও ফয়সাল আলী সাজীকে সীতাকুন্ডের গবীর পাহাড়ে একটি মন্দির ঃতেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হিন্দু ধর্মের অনুসারী পরিচয়ে ছদ্মবেশে সীতাকুণ্ড পাহাড়ের পাতালকালী নামক একটি মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
আজ বুধবার (২৬ জুন) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তা ও আসামিদের বহনকারী হেলিকপ্টারটি পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু ট্রাই-টাওয়ারে অবতরণ করে। এর আগে, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড়ে হেলিকপ্টার দিয়ে সাঁড়াশি অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। পরে সীতাকুণ্ড পাহাড়ের পাতালকালী (সীতাকুন্ড-ফটিকছড়ি সীমানায় ) নামক একটি মন্দির থেকে তাদেরকে গ্রেফতারের কথা জানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবি হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের কে বলেন, সীতাকুণ্ড পাহাড়ের পাতালকালী নামক একটি মন্দিরে তারা নিজেদের কে নাম-পরিচয় গোপন করে হিন্দু ধর্মের অনুসারী পরিচয়ে অবস্থান নেয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য প্রযক্তির মাধ্যমে তাদের অবস্হান নিশ্চিত হযে পরে সেখানে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। প্রায় ২৩ দিন যাবত তারা সেখানে বসবাস করে আসছিল।
তিনি আরও বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) আসামিরা খাগড়াছড়ি বা সীতাকুণ্ড পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে বলে জানতে পারি। এরপর ডিবির একটি দল সেখানে অভিযানে যায়। পরবর্তীতে আজ (বুধবার) আরেকটি দল নিয়ে আমরা সেখানে যাই। এ সময় সাঁড়াশি অভিযানে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিএমপি ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেফতারকৃত এই দুইজন এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল। তারা হত্যাকাণ্ডে শিমুল ভূঁইয়ার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিলেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা হত্যার জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলেও জানান তিনি।
হারুন অর রশীদ বলেন, অজ্ঞান করার জন্য সংসদ সদস্য আনারের নাকে ক্লোরোফরম দেন ফয়সাল। আর মোস্তাফিজ আনারকে উলঙ্গ করে চেয়ারে বেঁধে রাখেন। শিমুল ভূঁইয়ার মূল দুই সহযোগী ছিলেন গ্রেফতার ফয়সাল ও মোস্তাফিজ। আনারকে হত্যার পর ১৯ মে ফয়সাল ও মোস্তাফিজ দেশে ফেরেন।
তিনি আরও বলেন, ১৯ মে রাতে আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গে কথা বলেন ফয়সাল ও মোস্তাফিজ। এরপর শাহীন তাদের মাত্র ৩০ হাজার টাকা দেন। এরপর তারা দুর্গম পাহাড়ের ওই কালী মন্দিরে চলে যান। তাদের দুজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য-উপাত্ত বের করা হবে বলেও জানান হারুন অর রশীদ।
হারুন বলেন, কলকাতার যে ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যা করা হয়, সেই কিলিং মিশনে ছিলেন সাতজন। হত্যাকাণ্ডে জড়িত শিমুল ভূঁইয়ার পর দ্বিতীয় ও তৃতীয় হলেন ফয়সাল ও মোস্তাফিজ। হত্যাকাণ্ডে মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা এখন আমাদের মূল কাজ। এ ছাড়া এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে আমরা আইনের আওতায় আনব। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল মিলিয়ে মোট নয়জন গ্রেপ্তার হলেন হত্যার ঘটনায়।
আনার হত্যার ঘটনায় ডিবির ওপর কোনো চাপ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এ পর্যন্ত কোনো চাপ নেই। যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে, শুধু তাদেরই আমরা আইনের আওতায় আনছি। কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হবে না। আবার কোনো দোষী ব্যক্তিকে কেউ চাপ দিয়ে ছাড়াতে পারবে না।
এদিকে, এমপি আনার হত্যা মামলার আসামি কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে নিয়ে আলামত উদ্ধারে ঝিনাইদহ শহরের দুটি পুকুরে আরেকটি অভিযান চালিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি দল। তবে মোবাইল উদ্ধারে এখনও কোনো সফলতা আসেনি। পরে দুপুরে অভিযান আজকের মত সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। অভিযান চলমান থাকবে বলে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
WWW.DESHYNEWS24.COM/REGISTRATION NO-52472/2024
Leave a Reply